রুটির থালাটা শব্দ করে গারদের নিচ দিয়ে গড়িয়ে চলে এল... প্রায় রোজকার চারটে রুটি, পেঁয়াজ আর ঘ্যাঁট.. দীর্ঘ নয় বছর... কদাচিৎ সুখাদ্য...!! কাল মুক্তি বন্দীদশা থেকে... নেশার ঝোঁকে যে গর্হিত কাজ হয়ে গেছে, তার শাস্তি ভোগ চলছে....এমনটাই ভেবেছে রাজেন..!! পাপ করলে শাস্তি, তাই হচ্ছে, এবারটা একটু বেশি হয়ে গেল...!!
এর আগেও অনেকবার গারদে থেকেছে... শর্ট টাইম.. এইবারে ক্যাচাল হয়েছে মেয়েটার বয়েসটা... শুধু বারো ছিল তারওপর মরে ফরে গেল..!! জজসাহেবা ইমোশানাল হয়ে নয়বছর...! যাকগে যাক, কালকে বেরিয়েই বাড়ি.... ভাত খেতে হবে... বউটা ঘেন্নায় একবারও আসেনি.... বাচ্চাটাকে একবারও আনেনি শালি.. বাড়িটা একই আছে তো.. ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে!! ধর্ষণ এবং হত্যাকান্ডের আসামী রাজেন মুক্তি পাচ্ছে কাল..!!
পরদিন সকাল...এই জেলের মালগুলো এত ফালতু বকে... মালপত্তর দিয়ে পাওনাগণ্ডা বুঝিয়ে, সইসাবুদ করিয়ে ছেড়ে দিলেই হয়...! বাস থেকে নেমে হাঁটতে থাকে বাড়ির পথে... মাঝে বাচ্চাটার জন্যে চকলেট আর চুলের ফিতে কেনা..!! বাড়ি আসতেই শোনে বউয়ের চিৎকার.. নিজেকে শুধরে এসেছো নাকি অমানুষই আছো... আমরা ঠিক আছি.. খুব ভাল তোমাককে ছাড়া... তোমাকে আমাদের দরকার নেই...বেরিয়ে যাও.!! চুপচাপ শোনে.. ভাত খাব বলে দিয়ে স্নান করতে পুকুরের দিকে যায় রাজেন... গরম ভাত কতদিন পরে... আহা!!
স্নান সেরে ওঠার সময় চোখ যায় পুকুরঘাটের ঝোপঝাড়ের পেছন দিকে... লাল ফ্রক.... জেগে ওঠে পুরানো প্রবৃত্তি.. হ্যাঁ চোদ্দো পনেরোই বয়েস হবে মনে হয়... বাহ মহল্লায় আসতেই ভাল কিছু...!! আস্তে আস্তে উঠে এগিয়ে যায় মেয়েটির দিকে..!!! নাহ বেশি বাঁধা দিতে পারেনি..!! মুখটাই দেখা হলনা ঠিক করে.... যাকগে যা..... দুপুরটা শুনশান.. অল্প আওয়াজ... বুঝতে পারেনি কেউ এই পাড়াগাঁয়ে...! আর সেই ভুল করে নাকি.... শেষ করা চলবেনা একদম.. করলেই মার্ডার কেস..!! কেউ জানবেনা, ঝোপঝাড়ে ঠেলে দিয়ে বাড়ি ফিরে চুলটা আঁচড়ান নিজের আয়নায়.. গামছাটা মেলে দিয়েই, কই ভাত দাও..!!
কিছুক্ষণ.. ভাত দিচ্ছেনা কেন...হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচি..... হাউমাউ করছে বউটা... আরে আরে কি করে.... এর মধ্যেই জানাজানি নাকি..!! চোখে অন্ধকার.. এ তো পুকুরঘাটের বাচ্চাটা মনে হয়.. সেই মেয়েটা...এই বাড়িতে কেন... কি করে.. এখন কি করবে... কি করে বাঁচবে.... হঠাৎ বউ ঘরে ঢুকে এল উন্মত্তের মত.... দেখ তোমার পাপ লেগেছে.... এইবার কোন জানোয়ার তোমার নিজের মেয়েকে তোমার চোখের সামনে... দেখ দেখ ধম্মের কল বাতাসে নড়ে... আমার সব্বোনাশ করে দিল কে...কে করেছে... কোথায় গেছিলে তুমি... !!
অনুভূতিহীন শব্দগুলো কান ছুঁয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে... কেমন চারিদিক অন্ধকার ঠেকছে... মানে কি... নিজের মেয়েকে... সামনে রাখা চুলের ফিতেটা হঠাৎ অনেক বড় হয়ে গিয়ে জড়িয়ে যাচ্ছে যেন গলায়.. আহ নিশ্বাসটা কেমন বন্ধ হয়ে... ফুসফুসভরা বাতাস.. বেরোতে পারছেনা... পাঁজর ঠেলে ফেটে মুক্তি চাইছে প্রাণ...!
পুলিশ এসেছিল.... বুঝে পায়নি জেল থেকে ছাড়া পাওয়া আসামী..... ভাত খাব বলে হঠাৎ নিজের ঘরে আত্মহত্যা.... অদ্ভুত.... ডাক্তার বলছে নিজের গলায় প্রায় বারোটা প্যাঁচ দিয়েছে লোকটা... নিজেকে এত নৃশংসভাবে কেউ.. লাশটা বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে... এক হাতে চকলেট আর এক হাতে লাল চুলের ফিতের অংশ..!!! একলা ঘরে সব বুঝে লজ্জায়, হতাশায় কাঁদছে রাজেনের বউ... শেষকৃতকর্মের শেষবিচার... এতদিনে ঠিক শাস্তি পেল জানোয়ারটা..!
__________________________
© অর্ণব ভট্টাচার্য
আমরা সবাই তৃতীয় বিশ্বের জীবনযুদ্ধের পদাতিক সেনা। যেখানে উদয়াস্ত পরিশ্রমের মাঝে ব্যাক্তিগত শখ পূরনের পরিসর খুবই স্বল্প। এর পরেও কিছু মানুষ তাদের মনের ভাবনাগুলোকে অক্ষরের ভাষাতে ফুটিয়ে তোলেন। হয়ত অপটু হাতেই, কিন্তু সেটা ভাবনার পরিষ্ফুটনের পথে কোন বাঁধা নয়। আর সেই সকল মৌলিক লেখনিকে সম্মান জানাতে তার থেকে কিছু নির্বাচিত নির্যাস দিয়ে সাজানো আমাদের এই "নির্বাচিত অকপট লিপি"
Saturday, 18 March 2017
।। শাস্তি ।।
Labels:
অনুগল্প,
অর্ণব ভট্টাচার্য্য
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment