Saturday, 3 October 2015

দুই বোনের গল্প


টাটকা অনুভূতি
 


ফারহা ও মাহী দুইবোন - একজনের বয়স ছয় আর একজনের তিন এর একটু বেশী । আমারও সম্পর্কে বোন হয় তারা। ফারহা একটু বড় হয়েছে, একটু পারিপার্শ্বিক বুদ্ধিও হয়েছে, কাকে কখন কি বলতে হবে আর কি বলতে হবে না - সেটুকু সে তার মায়ের কাছে রপ্ত করেছে । আর পুচকি মাহী একেবারে ঠোঁটকাটা । যা মনে থাকে কোনো রাখঢাক না করে একেবারে অকপটে বলে দেয় সব ।
কিছুদিন আগেই কুরবানীর ঈদ গেল । বাড়িময় তো শুধু মাংস
 আর মাংস । বলা বাহুল্য গরুর মাংসই বেশী । ফারহাদের বাড়িতেও গরু কুরবানী হয়েছে তথাকথিত রেওয়াজ মেনেই । 

সে যাইহোক, এখন কথা হচ্ছে দুই বোনকেই বাড়িতে টিউশন পড়াতে আসেন এক বনেদী হিন্দু পরিবারের মধ্যবয়সী এক ভদ্রমহিলা । আমারো বেশ পরিচিত উনি। সারা বছর ধরেই পড়ান কিন্তু কুরবানীর পরে কয়েক সপ্তাহ ওনার একটু বিতৃষ্ণা দেখা যায় বাড়িতে পড়াতে আসার ব্যাপারে। কারণ টা কি সে তো বুঝতেই পারছেন। কিন্তু যাঁদের পেটের দায়ে টিউশন করতে হয় তাদের হাজার বিতৃষ্ণা থাকলেও পড়াতে তো আসতেই হবে। নাহলে ইনকামে মিনিমাম হাজার দুয়েক লস তো হবেই হবে।

কুরবানীর পরদিনই ফারহা আর মাহীর মা তার মেয়েদেরকে মাংস ভাত খাওয়াতে খাওয়াতে বোঝাচ্ছে, " বাবু স্কুলের মিস বা বাড়ির মিস যদি জিজ্ঞেস করে কুরবানীর কথা তোমরা কী বলবে...!!!" ফারহা তক্ষুনি তার বিচক্ষণতা নিয়ে বললো, " বলবো আমাদের ছাগল কুরবানী হয়েছে ।" তখন ওর মা বলে," একদম ঠিক।" কিন্তু মাহী যে ঠোঁটকাটা তার মা খুব ভালো করেই জানে । সে তো আপনমনে মুখে ভাত রেখে আধো আধো ভাবে বললো," কেন..!! আমাদের তো গলু কুলবানী হয়েছে।" যেই বলা ওমনি তার মা ধমক দিয়ে বলে, " ঐরকম বলতে নেই। তাহলে লোকে খারাপ বলবে।" আর সেইসময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে মা ও মেয়েদের কথোপকথন শুনছিলাম আর অজানা কারণেই মনে মনে হাসছিলাম ।

আজ এলাম তাদের বাড়ি। আসতেই শুনলাম মাহীর কীর্তি ।
 
তিনদিন আগের ঘটনা......
তাদের মিস পড়াতে এসেছেন আর যথারীতি দুইবোন বইখাতা নিয়ে পড়ার চেষ্টায় । হঠাত্‍ খাতায় পেন্সিলের আঁকিবুকি টানতে টানতে পুচকি মাহী র মাথায় গরু ভর করলো আর তখনই বলে উঠলো , " জানো তো মিস আমাদের কুলবানী হয়েছে ।" কিছু বলার আগেই মিস একটু বিব্রত হয়ে বললেন , " মাহী... আগে লেখা শেষ করো।" একথা শুনে মাহী তার অসম্পূর্ণ কথাটা মনে রেখেই আবার আঁকিবুঁকি টানতে লাগলো। এদিকে ফারহা যথেষ্ট সিরিয়াসলি তার লেখা লিখছে , মাহীর কথায় বিশেষ কান দেয়নি। কিন্তু বিচ্ছু মাহীর পেটে তো তার অসম্পূর্ণ কথা ঘুরঘুর করছে, দুলাইন লিখে আবার বলে ওঠে, " জানো তো মিস আমাদের কুলবানী হয়েছে, কুলবানী তে কী হয় জানো...!!!" এটুকু কথা সে মুহূর্তে ফারহার কানে যায় এবং সে অতি দ্রুততার সাথে বলে ওঠে," মিস আমাদের ছাগল কুরবানী হয়েছে ।" মিস প্রায় নিশ্চুপ। তখনই সেই নিশ্চুপতা ভেঙে মাহী তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলে ওঠে , " না গো মিস , আমাদের গলু কুলবানী হয়েছে। দুটো এই বড় বড় গলু। কত মাংছ । আমি লোজ খাই।" ফারহা বেগতিক দেখে বলে , " না মিস, আমাদের ছাগল কুরবানীই হয়েছে, মাহী জানে না।" মিস বেচারী গরু-ছাগলের আবর্তে পড়ে ভীষণ তিতিবিরক্ত হয়ে ওঠেন, এমনিতেই একটু এই কদিন কুরবানীর জন্য পড়াতে আসতে একটু বিব্রতই হোন। তার ওপর মাহীর এমন অকপট স্বীকারোক্তি। সব কারণের মিশেলে রাগান্বিত হয়ে দিয়ে দিলেন আর কি স্কেলের বাড়ি দুই বোনকেই । ফারহা চুপ করে সহ্য করে আবার খাতার দিকে মনোনিবেশ করে আর মাহী....................

কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে, " মিস আমি গলুল চর্বি খেতে খুউউউব ভানোবাসি ।"



------- শেহনাজ
 
03.10.2015


No comments:

Post a Comment