Wednesday, 17 May 2017

অকপটে ধন্যবাদ জ্ঞাপন


 (১) 

পেশা হিসাবে কেউ উড়োজাহাজ চালান তো কেউ আবার তার শৌচাগার পরিষ্কার করেন। সেটা যোগ্যতার বিষয়, কিন্তু দুটোই সমগুরুত্বপূর্ন কারণ একটার বিনে অন্যটা মুখ থুবড়ে পড়বে। একটা মেলবন্ধনই বা তালমিলই অগোছালো কিছুকে সিস্টেমে রুপান্তরিত করতে পারে। তাই অকপট পরিবারের প্রতিজন সদস্য সমান কৃতিত্বের অধিকারী। এটা আমাদের বৃহত্তর অকপট পরিবারের জন্য সাফল্যের একদম প্রাথমিক ধাপ, কারণ আমরা তরঙ্গের দুনিয়া থেকে রোদ, জল, ঘাম, বাতাসেরপৃথিবীতে নিজেদেরকে নিয়ে আসতে পেরেছি। আজ আমরা বলতেই পারি হ্যাঁ আমরা সেই অকপটুদল, যারা শুধুই ঘরে বসে আসমানি চাঁদোয়া বুনিনি। আমরা নক্সীকাঁথা বুনছি একটি একটি করে সেলাইয়ের ফোঁড়ে, রঙিন স্বপ্নের সুতো দিয়ে। শত শত উজ্জ্বল চোখের তারায় পিছলে পরা স্বপ্নেরা জোট বেঁধেছে আগামীকে ভালো কিছু উপহার দেওয়ার জন্য।
ওই দিনের কিছু কথা অকপটে।
শুরুটা ঠিক কোথা থেকে করবো তা নিয়ে ধন্দে আছি।
মনে হল শুরুটা পেশাদারিত্ব দিয়েই করা উচিত। জয়শ্রী প্রেসের বসাক বাবুকে প্রথমেই ধন্যবাদ দিই, কারণ তিনি অত্যন্ত পেশাদারঢঙে ডুবিয়ে না দিলে মহামায়া প্রেসের মালিক মাইতিদার মত একজন সদাহাস্য সুজন দাদাকে পেতাম না। তাকে ঠিক কিভাবে ধন্যবাদ দেওয়া যায় বা অদৌ ধন্যবাদ দিয়ে ওনার প্রতি কৃতজ্ঞতারাশি অক্ষরের ভাষায় প্রকাশ করা যায় কিনা জানিনা। পরে চলে আসে ওনার অফিসের ডিটিপিকারী দাদাটি। একটা মানুষ যেভাবে নব্য ও জেনুইন আনাড়ীদের সাথে করে ও সহ্য করে একটা ভীষন রকম বন্ধু সুলভ ধুর কি আছে, এক্ষুনি ঠিক করে দিচ্ছিপরিবেশে কিভাবে কাজটা শেষ করিয়ে নিতে হয় সেটা শিক্ষণীয়। শনিবার বেলা দুটোর সময়েও পত্রিকার সূচীপত্র টাইপ হচ্ছে কম্পিউটারে, এটা শুধু পেশাদারীত্ব দিয়ে হয়না, অন্যের আবেগকে হৃদয় দিয়ে অনুভব না করলে এই পেশাদারীত্ব আসেনা।
একটু নির্লজ্জভাবেই অকপট স্বীকারোক্তি করাই যায়, যে ঘর বা সংসারের দৈনন্দিন কাজকর্মে আমি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কুঁড়ের শিরোপা পাওয়ার হকদার। এক তো অকর্মা তাই গোদের উপরে বিষফোঁড়া ল্যাপটপে খুটখাট। মায়ের ভাষাতে কি যে করিস, সারাটা দিন কে জানে! অফিস থেকে ফিরে বউ বাচ্চা টিভি সমাজ কথাবার্তা কিচ্ছু নেই, ওই শয়তানের হাতবাক্স খুলে বসে পরলি!" তাই ওইদিন প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত অকপট পরিবারের সামনের সারিতে ভালমন্দসবটা মিলিয়ে মায়ের উপস্থিতি ও অপলকভাবে গোটা বিষয়টা উপভোগ করাটা আমার জন্য সেরা পরিতৃপ্তি ছিল।
এবার আসি অনুষ্ঠানে।
প্রেস থেকে বই নিয়ে অবন মহলে পৌঁছালাম সকাল নটার আশেপাশে। পৌছেই দেখি আমাদের প্রবাল দা (Prabal Devangan Chakraborty), তাঁর দেবাঙ্গন NGO এর দুজন ভাইবোন সহ দায়িত্বে থাকা মিউজিক সিস্টেম বাকি সকল কিছু নিয়ে ইতিমধ্যেই উপস্থিত। দাদা মানে বড়, তাঁকে ধন্যবাদ দেওয়া যায়না, তাঁকে অনুসরণ করতে হয়, যে কিভাবে দায়িত্ব সামলাতে হয় আর সময় জ্ঞান কাকে বলে! সাথের ওই মেয়েটি নামটা ভুলে গেছি, কি অপূর্ব ধৈর্য্য আর মমতা সহকারে, আরো দুজন বন্ধুর সহযোগে ফুল দিয়ে গোটা মঞ্চটা সাজালো সেটা যারা দেখেছেন তারা প্রত্যেকেই অবগত। আমরা দখল করলাম দুটো গ্রিনরুমের দ্বিতীয়টা, প্রথমটা আমাদের গায়ক দলের জন্য বরাদ্দ রইলো। ঐদিনের ঐ ছালওঠা গরমে গ্রিনরুমের বাতানুকুল যন্ত্রের ঠান্ডা বাতাসটুকুই প্রাথমিক তৃপ্তির শুরুটা করে দিয়েছিল, সেটার রেশ অক্ষুন্ন রাখতে যথারীতি একমুখ হাসি নিয়ে ঘর্মাক্ত ফিরোজভাই (Firoz Akhter) হাজির। কিছু মানুষের চেহারার ধাঁচটাই এমন ভাবে তৈরি যে দেখলেই মনে ভরষা তৈরি হয়। ফিরোজ ভাইও দেবাঙ্গনের দাদা-দিদির সাথে হাত লাগালেন আমাদের অকপটের ফুলের লোগো তৈরীতে।
পশ্চিমবঙ্গের সেই গলার মত স্থানটা, ইটাহার নামক জায়গাটা সম্ভবত তার আশেপাশেই হবে। অকপটের প্রতি কতটা টান থাকলে লোকাল বাসে প্রায় বাদুড়ঝোলা হয়ে ঝুলতে ঝুলতে নির্ঘুম অবস্থায় কোলকাতা আসতে হয় বেলা নটার মধ্যে মঞ্জুর ভাইকে (Manjur Hossain)আসলে সেই মনের ভালবাসা, ভালবাসাতেই একমাত্র বিজয় সম্ভব, যুদ্ধে তো দখল করা যায় না। ইতিমধ্যে একটা গর্জিয়াস পাঞ্জাবিতে শোভিত হয়ে সুব্রতদা, (Subrata Mondal) বৌদি (Ratna Mondal) আর শেহনাজও এসে গেছে। এদিকে আমার তিন দস্যি, মা, রুমি (Rumi) আর কুহেলীর(Kuheli) পেটে ছুঁচোয় ডন-বৈঠক দিতে শুরু করেছে। অতএব হালকা প্রাতরাশের ব্যবস্থা করে ফিরতেই দেখি প্রেক্ষাগৃহ কতৃপক্ষ মূলদ্বারটি খুলে দিয়েছেন। এই একজন বৃদ্ধ ভদ্রলোক, যিনি প্রেক্ষাগৃহের ভারপ্রাপ্ত ছিলেন, অত্যন্ত বিশ্রীরকমের কটূভাষী ও সোজাসাপ্টা বাক্যবাণ নিক্ষেপ করেন অনবরত, কিন্তু একজন ব্যাবসাদার হিসাবে নিজের সংস্থাতে এমন একজন মানুষ পেলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করতাম।
আগেরদিন সোজা হাসপাতাল থেকে কোলকাতা এসেছিলাম, অনুষ্ঠানের জন্য পোশাক পরিবর্তনের সময় বা মানসিকতা কোনটাই ছিলনা সেই মুহুর্তে। শেহনাজকে কাঁচি আর সেলোটেপ আনতে বলেছিলাম আগেরদিন, তার কাছ থেকে সেই দুটো নিয়ে মূল দ্বারে অকপটের জিরাফওয়ালা স্বাগতমপোস্টারটি সাঁটতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম কাঁচিতে ধার নেই। শেহনাজকে শুধাতে বললো এ কাঁচি সুব্রতদার, উনিই দিয়েছেন। বুঝলাম সুব্রতদার ওই রকম গোঁফ বৃদ্ধির কারন কি! যাই হোক আমার সাথী মঞ্জুর অত্যন্ত নিপুণতার সাথে বারংবার সেলোটেপের খেই হারিয়ে নীল ফ্লেক্সটা সাঁটা শেষ করার পর একটু ধুম্রপান করতে সাইড পানে আসতেই দেখি গলাতে সেই চিরপরিচিত ঢঙে ক্যামেরা ঝুলিয়ে আমাদের অভিজিৎ দা (Abhijit Mukherjee) সাথে আপনজন তনুশ্রী ম্যাডাম (Tanusree Ghosh)
এই নিয়ে সম্ভবত দ্বিতীবার আলাপ অভিজিৎদার সাথে, এই মানুষটার ব্যাক্তিত্বের মধ্যে একটা চার্ম আছে। একটা মানুষ যে কতটা নিপাট নির্বিরোধী হয়ে নিজের প্যাশনের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখাতে পারেন, সেটা অভিজিৎ দাকে দেখে শিক্ষণীয়। সমস্ত অনুষ্ঠানের যাবতীয় মুহূর্তগুলোকে কি দারুণ দারুণ এঙ্গ্যেল থেকে সময়কে বন্দি করে আমাদের উপহার দিয়েছেন, তার জন্য আলাদা করে তারিফ করতে হয়। টাকা নিলেই পেশাদার হওয়া যায় কি? ফোটোগ্রাফির শখ অনেকেরই থাকে, জানিনা কতজন, অভিজিৎ দার মত ছবি তোলেন।

ক্রমশ......


No comments:

Post a Comment