Sunday, 7 February 2016

রোজ ডে

টাটকা অনুভূতি 
**********

সকাল থেকেই ভার্চুয়াল তথা রিয়েল লাইফে বেশ কানাঘুষো " রোজ ডে " উপলক্ষে । ওয়ালে ওয়ালে গোলাপগুচ্ছ ঘুরে বেড়াচ্ছে । আমিও দু'একটা পোষ্ট মেরে দিলাম বেশ ঘ্যাম ট্যাম নিয়ে। যাইহোক আজ রোজ ডে তে বেশ কিছু মজার ও মনছোঁয়া অনুভূতির অভিজ্ঞতা হলো।

এ সপ্তাহে বাড়ি ফিরে দু'দিন মামাবাড়িতেই কাটলো। মামার ছোট মেয়েটার আপেলের মতো গালে গোলাপী গোলাপী ঠোঁটের জন্য ওর নাম রাখা হয়েছিল 'রোজ'। সকালে ঘুম থেকে উঠেও হাঁক দিলাম , "রোজ ও রোওওওওজ ওঠ রে, ওঠ। আজ রে তোরই ডে। উঠে পড় বাবু। লোকজন সব তোর নাম করছে রে আজ !! " সে তখন চাদরের ভেতর থেকে পিচুটি পড়া চোখটা ঘষতে ঘষতে ভাঙা গলায় একটু বিরক্ত হয়েই বললো, "আমার দিন না ছাই !! পড়তে বসার জন্যই তো ডাকছো। জানি মা তোমাকে হাত করে নিয়েছে। রবিবারেরও এত্তু ঘুমোতে দেবে না। তোমার এসব দিদিমণি গিরি তোমার স্কুলেই দেখিও।" এই বলে মুখটা বাঁকিয়ে আবার চাদরে ঢুকে গেল। আমিও একটু উদাস হয়ে ভাবলাম, "যা বাবা, রোজ ডে এর সকালেই রোজের মুখ ঝামটানি খেলাম।
 :( :( "

বেলা গড়ালো, মামাবাড়ির নতুন দোতলায় নতুন ঘর দেখতে ওপরে গেলাম। ব্যালকনি দিয়ে দেখি গলিতে দুটো কমবয়সী ছেলে হাতে দু'চারটে গোলাপ নিয়ে যাচ্ছে। দুজনেরই মুখে সে কী প্রসন্নতা !! নিজেদের প্রিয়জনের হাতে ভালোবাসার এই চিহ্নটা তুলে দিতে পারলেই যেন তাদের মোক্ষ লাভ হবে। ওদের দিকে দেখতে দেখতে অবচেতন মনে অবচেতন ভাবেই একবার দোল খেল অস্ফুট ইচ্ছে । নিজের অজান্তেই মনে মনে বলে ফেললাম, "যদি আমাকেও কেউ........ !!!" মুহূর্তেই সংবেদনশীল মন নাড়া দিয়ে বলে উঠলো, "এ আমি কী ভাবছি !! এগুলো তো জাস্ট ন্যাকামি ।"
 

বিকেলে হানা দিলাম মাসীর বাড়িতে। আমার ভীম প্লাস কুম্ভকর্ণ ভাইটা ম্যাট্রিকের গন্ডী পেরোনোর আদিখ্যেতায় আজকাল ভীষণ ব্যস্ত। তার পরীক্ষার হালচাল শুধাতে এই সর্ট ভিজিট। মাসীর রুমে ঢুকেই চোখে পড়লো টেবিলে এক চলতি ফুলদানী মানে কাঁচের গ্লাসে একগুচ্ছ লাল টকটকে গোলাপ। লাল রঙ এমনিতেই বেশ টানে আমাকে। তার ওপর যদি গোলাপ হয়, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। তাই চলে গেলাম সটান টেবিলের দিকে। কাছে যেতেই মাসীর ছোট বিচ্ছুটা ছুট্টে এসেই বললো, "ওগুলো হাত দেবে না আপা। আজ রোজ ডে না, ঐজন্য কাল স্কুলে আমার মিসকে এই ফুলগুলো দেব। বুঝতে পারলে !! হাত দেবে না একদম..।" ওর গালে একটু গাল ঘষে আদর করে বললাম, "আমি হাত দেবো না সোনা, শুধু দেখছি। " ইতিমধ্যেই মাসী চা নিয়ে হাজির। 

ওর কথা শুনে মাসী হেসে বললো, "তোর আপাও তো মিস রে । ওকেও একটা গোলাপ দে ।" এইশুনে ছোট্টো প্রাণে কী দয়া হল কে জানে !! সবথেকে বড় গোলাপটা গ্লাস থেকে বের করে মুচকি হেসে বললো, "এই নাও আপা। হ্যাপি রোজ ডে ......." মনের অস্ফুট ইচ্ছেটা ঐ আমার প্রাণের টুকরো পুচকা ভাইটাই পূরণ করলো। আবেগে তাকে জড়িয়ে ধরলাম আর বললাম, "না রে বাবু, আমি তো তোর আপা। 

ফুল না দিলেও তোর আপাই থাকবো। আর ফুল নিয়ে আমি কী করবো টা বল !! তুই বরং তোর মিসকেই দিস।" এই বলে গ্লাসে ফুলটা রেখে দিলাম। বিচ্ছু টা আমার পার্স থেকে ওর জন্যে আনা চকোলেট টা নিয়ে দৌড় দিল। আর আমি স্মিত হেসে মনে মনে নিজেকে বললাম, "হ্যাপি রোজ ডে............"

শেহনাজ আলম


Thursday, 4 February 2016

খেয়ালী পোলাও

টাটকা অনুভূতি 
**********

পরপর তিনটে ক্লাস নিয়ে এসে বসলাম আমার 'S.A.' লেখা চেয়ারে। যথারীতি এসেই তো ব্যাগের চেন খুলে হাতে নিলাম সাধের অ্যানড্রয়েড। ততক্ষণে আমার দু-তিনজন সহকর্মী 'পুরুষতান্ত্রিক' সমাজ নিয়ে আলোচনায় বসেছে। আমার ডানে-বাঁয়ে বেশ গরমাগরম পরিস্থিতি। সক্কলে বেশ মেতে উঠেছে পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্হার ঘোর বিরোধিতায়। আমি আমার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সকলের মুখের এক্সপ্রেশন খেয়াল করছি আর মনে মনে বলছি, "বেশ জমে উঠেছে তো মহল টা !!" 


কয়েক মিনিটের মধ্যেই স্টাফরুম উত্তাল। সকলে বেশ চোখ পাকিয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ , "এবার কিছু একটা করতেই হবে ব্যাটা পুরুষদের বিরুদ্ধে, করতেই হবে..।"এ হেন পরিস্থিতিতে আমার থেকে এক চেয়ার ছেড়ে বসা সহকর্মী কে নিতান্তই কৌতুহলে জিজ্ঞেস করে বসলাম, "কীরে, আজ সকালে তোর বর কে প্রণাম করেছিস ?" শুনেই সে গম্ভীর হম্বিতম্বি ভাব থেকে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে একটু লাজুক হেসে বললো, "হ্যাঁ রে করেছি, রোজই করি। তুই ওসব বুঝবি না বুঝলি। বিয়ে কর বুঝবি।" আমি নিতান্তই গো বেচারীর মতোই বললাম, "বেশ।"


কিন্তু কৌতুহলী মন চুপ কী থাকে !! আবার জিজ্ঞাসা করলাম, "প্রণাম কী করতেই হয় !!"


সে তখন বেশ ঐতিহ্যবাহী উত্তর দিল, "ছোটরা যদি বড়দের প্রণাম করে তাহলে অসুবিধা কী !! আর এটা শুধু স্বামী-স্ত্রী নয় ; সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য । এটা শুনেই আমার ছোট মাথায় যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। সঙ্গে সঙ্গে কাউন্টার, "তাহলে সচিন তেন্ডুলকর নিশ্চয়ই তাঁর স্ত্রীকে প্রণাম করেন রোজ সকালে !!উনি তো সচিন থেকে বয়সে বড় ।" এ কথা শোনামাত্রই চোখ বিস্ফারিত করে সজোরে বলে উঠলো, "তা কী কখনো হয় !! একজন স্বামী তার স্ত্রীকে কীভাবে প্রণাম করতে পারে !! স্বামী তো স্বামীই।" এক মৃদু হাসি দিয়ে শুধু বললাম তাকে, "পুরুষতান্ত্রিক সমাজকেই তো আপন করে নিয়েছিস !! তবু কেন এর বিরোধীতা করার সঙ !!" কথাটা শুনে সে শুধু দাঁত ক্যালিয়ে হাসি দিল আর চক ডাস্টার নিয়ে ক্লাসে চলে গেল।

আর আমি ভাবতে লাগলাম, "পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্হাকে আমরা নারীরাই তো মেনে নিয়েছি। আর এতে অপরাধ বা কীসের !! একজন পুরুষের ঔরসে জন্মালাম পৃথিবীতে, হাত ধরে বড় হলাম, নিজের পায়ে দাঁড়ালাম।এক পুরুষই তো মেয়েবলাতে ভাইবোনের খুঁনসুটির সোহাগ ভরলো। এক পুরুষই তো মনের আঙিনায় ঘর করে বসলো যাকে পাওয়ার নেশা দিনরাত। তবু কেন আমাদের এদের প্রতি এত বিতৃষ্ণা !! এর উত্তরও সেই পুরুষের কাছেই আছে। পারবেন না কী কোনো পুরুষ কোনো নারীর প্রতি অন্যায় না করতে !! পারবেন না কী কোনো পুরুষ প্রত্যেকটা নারীকে তার যোগ্য সম্মান দিতে !! পারবে না কী !!নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক । তাই আমরা কী পারবো না একে অপরের পরিপূরক এক সমাজ বানাতে !! যেটা না হবে পুরুষতান্ত্রিক, না হবে নারীতান্ত্রিক।"


এসব খেয়ালী পোলাও ভাবতে ভাবতে ঢং ঢং করে ঘন্টা পড়ে গেল। ক্লাস টেনের সাঁতরার বইটা হাতে নিয়ে চলে গেলাম ক্লাসে।

শেহনাজ আলম