Monday, 7 December 2015

হ্যালুসিনেশন

টাটকা অনুভূতি 
**************

হঠাৎ করে মিনিট দশেকের জন্য চোখটা লেগে গেছিল। পুকুর ধারের জানলাটার ফাঁক দিয়ে আসা এক পলকা ঠান্ডা বাতাসে শিহরিত হতেই ঘোরটা কেটে গেল।
 

আজ একটু তাড়াতাড়িই স্কুল থেকে ফিরলাম। এই পরীক্ষা সিজিনে এই প্রথমই মনে হয় একটু তাড়াতাড়ি ফিরলাম। নাহলে পরীক্ষা শেষ হলেও আমাদের কাজ শেষ হয় না। রোজ সেই চারটেতেই স্কুল থেকে ফেরা।

আজ ফিরেই আমার দ্বিতীয় মায়ের হাতে গরম গরম ডিম-এ-খাস চেখে ওপরে আমার চিলেকোঠায় এলাম। এক আজব নিস্তব্ধতা সারা ঘর জুড়ে আমার। নিজের নিঃশ্বাসের আওয়াজও শুনতে পাই আমি। খাতা জমা দেওয়ার তাড়া আছে তাই গায়ে গোলাপী চাদর টা জড়িয়ে নাইনের খাতার বান্ডিল খুলে বসলাম। খাতা নিয়ে একটু বসতেই সকাল থেকে ভার হয়ে থাকা মাথা আরো যেন ভার হতে লাগলো। "চশমাটা পরা উচিত"- এই ভেবে উঠলাম আর শুরু হলো চশমা খোঁজা। সাইড ব্যাগের সব চেন খোঁজা হলো,বইয়ের তাক খুঁজলাম-কোথ্থাও পেলাম না। আনমনে নীলু(আমার বোন)কে ডাকতে লাগলাম,"নীলু আমার চশমাটা কই রে..!!"তৎক্ষণাৎ মাথায় এলো,"এখানে নীলু কোথায়..!! আমি তো একাই.." শেষ পর্যন্ত না পেয়ে হতাশ হয়ে আলমারির সামনে বসলাম। চোখ তুলে আলমারির আয়নায় দেখতেই দেখলাম যে চশমা তো আমার চোখেই। কখন পরেছি মনেও নেই। মনে করার চেষ্টাও করে পারলাম না। তারপর বেশি না ভেবে খাতা নিয়ে বসলাম। খাতা দেখতে দেখতে কখন যে বালিশে এলিয়ে পড়লাম আর ঘোরে আচ্ছন্ন হলাম কে জানে !!

সে যাই হোক, মিনিট দশেকের ঘোর কাটতেই দেখলাম বিছানায় এক বড় কালো মাকড়সা হাঁটছে। একটু হঠকারিতা নিয়ে উঠে বসে দেখি কিনা সেটা আর নেই। চোখের সামনে এক্ষুনি ছিল আবার এক্ষুনি নেই। সত্যিই কোনো মাকড়সা ছিল কিনা সে বুঝে উঠতে পারলাম না।

আজ আরো এক আজব অনুভূতি হলো। স্কুলে আজ 'ইস্কন',নদীয়া থেকে একজন সাধক বিভিন্ন বই নিয়ে এসেছিলেন-সোজা কথায় বিক্রি করতে। ভগবৎ গীতা, শ্রীকৃষ্ণ কথা, শ্রী চৈতন্য চরণামৃত ইত্যাদি নানা ধর্মীয় বই ছিল ওনার কাছে। প্রতিটা বইই আমার সামনে বসে আমার হাতেই দিচ্ছিলেন তিনি। একটা আজব গন্ধ বইয়ের পাতাগুলোতে। ওনার কাছে ধূপের প্যাকেটও ছিল। সম্ভবত সেই ধূপেরই গন্ধ পাতাগুলোতে। বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে সেই গন্ধ আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল আর কেন যেন মনে হচ্ছিল কোনো মৃত্যু বাড়িতে কোনো মৃতদেহের সামনে জ্বালানো ধূপের কাছে বসে আছি। বারবার এই অনুভূতিতে সারা গা গুলিয়ে উঠলো। আমি পাশের দিদিমনির হাতে বইগুলো ধরিয়ে উঠে পড়লাম আর বাইরে চলে গেলাম।কিন্তু সেই গন্ধ ও তার অনুভূতি... স্কুল থেকে ফেরার পথে রাস্তাতেও পেলাম, রুমে ফিরে এসে পেলাম আর এখনো লিখতে লিখতে পাচ্ছি।
এক একটা অদ্ভুত অনুভূতি আসছে আর তার কারণ কী জানি না ।

হ্যালুসিনেশন ঘটে শুনেছি। আমার সাথে কি তাই ঘটছে...!! যে জিনিস নেই দেখতে পাচ্ছি, যে বস্তু নেই তার ঘ্রাণও পাচ্ছি। আনমনে এমন সব কাজ করছি যা সত্যিই পরে ভাবাচ্ছে ।

হ্যালুসিনেশন হোক আর নাই হোক এইসকল অনুভূতির কী কোনো ব্যাখ্যা আছে....!!!
.
.
কে জানে......!!!!!

~ শেহনাজ আলম


Thursday, 3 December 2015

নিরুত্তরের বাস

টাটকা অনুভূতি 
**************

সকালে অনলাইন থেকেই জানলাম যে আজ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। প্রথমেই মনে হল আজ তো আমারই দিবস। একটু স্মিত হাসি মুখ নিয়ে স্কুল বেরোতে বেরোতে 
Malabika দি কে বললামও "দেখ আজ আমার বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস, মানে আমারও দিবস । সেও আমাদের স্বভাবসিদ্ধ খুনসুটি তে বুক বাঁকিয়ে দিল। তারপর চললাম স্কুল। সারাদিন পরীক্ষার ইনভিজিলেশন ও একটু আধটু ফেসবুকে উঁকিঝুঁকি করে দুপুর গড়ালো।
কদিন যাবৎ শরীরটাও আর তেমন সাথ দেয় না।
তাও কিছু রুটিন কাজ তো করতেই হয়।
আজ বৃহস্পতিবার, তাই আজ আমার মনের শান্তির খোঁজে পাড়ি দেওয়ার দিন আমার এক অতি আপন স্হানে মানসিক প্রতিবন্ধকতা জয়ের উদ্দেশ্য। আসলে সবই এক বাহানা নিজেকে ভালো রাখার।
ফেরার পথে এক অল্প বয়স্ক যুবককে রাস্তার ধারে গান গাইতে শুনলাম। বেশ সুরেলা গলায় কোনো এক গান গাইছে। কথা বুঝতে পারা যাচ্ছে না কিন্তু সুর কানে লাগছে তার। আধফাটা জামা, দারিদ্র্যতা ঠিকরে ঠিকরে পড়ছে তার সমস্ত অবয়ব থেকে। কিন্তু তার মুখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি। হঠাত্‍ করে আমার নজর থামলো তার পায়ে, দুটো পা-ই তার গোড়ালি থেকে নেই। মাটির ওপর যেন দুটো বাঁশ তার দেহের ওপরের অংশকে ধরে রেখেছে। প্রকৃত এক প্রতিবন্ধীকেই দেখলাম আজ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে।
আমরা নজর ঐ যুবকেই আটকে থাকলো বেশ কিছুক্ষণ। এত বড় শারিরীক প্রতিবন্ধকতা তবু সে কত প্রাণোচ্ছল ; হয়তো অনেক সমস্যা তাকে ঘিরে বাস করছে। সে হয়তো তার প্রতিবন্ধকতা কে জয় করতে পেরেছে। কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠলাম এসব ভাবতে ভাবতে।
তারপর অজস্র চিন্তা ঘিরে ধরলো। মুহূর্তে মানসিক প্রতিবন্ধকতা তার স্বরূপ নিয়ে হাজির হলো আমার মনের আঙিনায়। মৃদু মৃদু শীতল বাতাসে চোখের কোণে উষ্ণতা ঝরে পড়লো।
তারপর..........
আসলে প্রতিবন্ধকতা প্রতি পদে পদেই এসে দাঁড়ায়। আমি একা নয়, প্রতিটা মানুষের জীবনেই চলে নিজের নিজের সমস্যার প্রতিবন্ধকতা । কেউ জয় করে, কেউ কেউ জয় করার চেষ্টা করে, আর কেউ বা হাজার চেষ্টা করেও জয় করে উঠতে পারে না।
 

ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা গড়িয়ে এলো। মনে একটাই প্রশ্ন বেশ কয়েকবার ঘুরপাক খেল, "কে বেশী প্রতিবন্ধী ; আমি না সেই রাস্তার ধারের পা হীন যুবক....!!!"

উত্তর পেলাম না..........

~ শেহনাজ আলম